রূপালীদেশ রিপোর্ট: চলমান ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছে দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে হাতে গোনা চার-পাঁচটি ছাড়া কোনও দল স্থানীয় সরকার পরিষদের এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। দলীয়ভাবে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টির অংশগ্রহণের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব দলের অংশগ্রহণও একেবারে সীমিত পরিসরে। শুধু সাংগঠনিকভাবে কিছুটা অবস্থান রয়েছে এমন এলাকায় তারা প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে দলীয় মনোনয়ন না দেয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও অনুসারীরা স্বতন্ত্রভাবে অংশগ্রহণ করছেন নির্বাচনে। পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত জানালেও বিএনপির কিছু নেতাকর্মী ও অনুসারী নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন।
আলাপকালে রাজনৈতিক দলের নেতারা জানান, যেসব রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, সেসব দল ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেনি। সরকারের ঘনিষ্ঠ ও নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের প্রতি পক্ষপাত ছিলÍএমন দলগুলোও অংশগ্রহণ করেনি। উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছে বিএনপি, এলডিপি, সিপিবি, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জেএসডি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপসহ আরও বেশ কয়েকটি দল।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি অংশ নিয়েছিল। বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও এ দলগুলো নির্বাচন থেকে বিরত রয়েছে।
গত ১৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বলা হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও তার সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবং প্রশাসন ও পুলিশের প্রকাশ্য একপেশে ভূমিকার জন্য এর আগে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। এখনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। বিদ্যমান ‘অরাজক পরিস্থিতি’ আরও অবনতিশীল হওয়ায় আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার যৌক্তিক কারণ রয়েছে।
জানতে চাইলে এলডিপি নেতা সালাহউদ্দিন রাজ্জাক জানান, এলডিপির কোনও নেতা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। দলীয়ভাবে নির্বাচন বর্জন করেছে এলডিপি।
প্রশ্নের জবাবে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না।
ইসলামী আন্দোলনের নেতা আহমদ আবদুল কাইয়ূম এ প্রতিবেদককে জানান, বিগত উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও এবার নির্বাচন বর্জন করছে ইসলামী আন্দোলন। তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন বর্জন করছে ইসলামী আন্দোলন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বর্জন ও অনুসারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিলেও উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্বে অন্তত ৩৮ জন অংশগ্রহণ করছেন চেয়ারম্যান পদে। এদের মধ্যে অন্তত ১৮ জন নেতা দলীয় পদে রয়েছেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে শোকজ ও বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে বিক্ষিপ্তভাবে দু-একজন অংশগ্রহণ করলেও বিরোধী অন্য কোনও দলই বহিষ্কারের পথে যাচ্ছে না। খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আবদুল জলিল বলেন, ‘আমরা এই নির্বাচনে এত মনোযোগ দিচ্ছি না। দলীয়ভাবে খেলাফত মজলিস উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। দু-একজন বিচ্ছিন্নভাবে অংশগ্রহণ করলেও এগুলো গুরুত্ব দিচ্ছি না।’
সম্প্রতি স্থানীয় সরকারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদের জামানত ১০ গুণ বৃদ্ধি করে এক লাখ ও পঁচাত্তর হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা আলাপকালে উল্লেখ করেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামানত হিসেবে নতুন নিয়মের কারণে প্রার্থী ও দলগুলোর মধ্যে অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে বেশি।
এ বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি না। আমাদের পার্টির কেউ অংশ নিতে পারেনি। উপজেলায় কেউ অংশ নেয়নি। গণতন্ত্র মঞ্চেরও কোনও শরিক দল অংশ নেয়নি।’
সরকারপন্থি দলগুলোরও অনীহা: সরকার সমর্থক দলগুলোর মধ্যেও উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণে তেমন সাড়া নেই। দলীয় প্রতীকে কোনও প্রার্থী দেয়নি এই দলগুলো। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÍবাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, জাকের পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, গণফ্রন্ট ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি। কোনও কোনও দলের সূত্র দাবি করেছে, বিগত জাতীয় নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সহযোগিতা না পাওয়ায় চলমান উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছে বেশ কয়েকটি দল।