কুমিল্লায় দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলার আসামির পদোন্নতি!

Date:

আয়শা আক্তার কুমিল্লা প্রতিনিধি // কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের টেলিফোন অপারেটর মো. আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমানীত হওয়ায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু ওই মামলা চলমান অবস্থায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উলটা তাকে হিসাবরক্ষক পদে পদোন্নতি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জানাজানি হলে কুমেক হাসপাতালের কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দুদক ও কুমেক হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমেক হাসপাতালটি জেলার আদর্শ সদর উপজেলার কুচাইতলী এলাকায় অবস্থিত। মো. আবুল খায়ের কুমেক হাসপাতালসংলগ্ন কুচাইতলী গ্রামের মৃত আবদুল হামিদের ছেলে। তিনি কুমেক হাসপাতালে প্রথমে টেলিফোন অপারেটর পদে চাকুরী লাভ করেন। কর্মরত অবস্থায় তার বিরুদ্ধে অবৈধ প্রভাব বিস্তার, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ ওঠে। সূত্র জানায়, এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিগত সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আবুল খায়েরকে বদলিসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কুমেক কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উলটা তাকে স্টেনোগ্রাফার কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে পদোন্নতি দেয়। এদিকে এসব অভিযোগ পেয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে দুদক।

দুদক কুমিল্লা সমন্বিত জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমানীত হয়েছে। এতে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের জন্য ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (অনু: ও তদন্ত-৫) সুবেল আহমেদের স্বাক্ষরে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুমিল্লার উপ-পরিচালক বরাবরে পত্র প্রেরণ করা হয়। ওই পত্রের প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর ১০ লাখ ৬৫ হাজার ৫৬৬ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মো. আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। মামলাটি তদন্ত করছেন দুদক সমন্বিত জেলা (কুমিল্লা) কার্যালয়ের কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান রুবেল। সূত্র জানায়, মামলা দায়েরের পর আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুমেক পরিচালক বরাবরে পত্র দেয়া হলেও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়।

কুমেক সূত্র জানায়, আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে দুদক মামলা দায়ের করলেও চলতি বছরের ১০ আগস্ট তাকে পদোন্নতি দিয়ে একটি অফিস আদেশ জারি করেন হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি। এ বিষয়ে কুমেক হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘তার (আবুল খায়ের) বিরুদ্ধে দুদকের মামলার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। শূন্য পদ থাকায় তাকে সাময়িকভাবে কাজ করতে বলা হয়েছিল।’ অভিযুক্ত হিসাবরক্ষক আবুল খায়ের উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা রয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেনে-শুনে বিধিমোতাবেক আমাকে হিসাবরক্ষক পদে পদোন্নতি দিয়েছেন।’ কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমি এখানে যোগদান করেছি। তবে আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার বিষয়টি জেনেছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে জানার জন্য দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুমিল্লার উপ-সহকারী পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান রুবেল জানান, অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমানীত হয়েছে, শিগগির আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

spot_img

Popular

More like this
Related

চকবাজার থানা ইউনিট দায়িত্বশীল শিক্ষা বৈঠক অনুষ্ঠিত

ইসমাইল চৌধুরী, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের শূরা সদস্য ও আন্তর্জাতিক...

চট্টগ্রাম প্রতিদিন অফিসে সংঘবদ্ধ হামলার চেষ্টায় ক্ষোভ, প্রতিবাদ, নিন্দার ঝড়

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী পাহাড় এলাকায় অবস্থিত দৈনিক...

কুমিল্লা ইপিজেডে অস্বস্তিকরপরিবেশ-অপপ্রচারে হুমকির মুখে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ!

#জুট ব্যবসার একক নিয়ন্ত্রণে ২১ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর...

বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনে হস্তক্ষেপ করে নি যুক্তরাষ্ট্র!

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং ড....