গরমে চরম ভোগান্তিতে রাজধানীর শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা

Date:

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে ঢাকায় রিকশা চালান শফিকুল ইসলাম (৫০)। প্রতি বছরই গ্রীষ্মের সময়টাতে রিকশা চালাতে কষ্ট হয় তার। তবে এ বছর তীব্র তাপদাহের কারণে রিকশা চালানো আরও বেশি কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। তারপরও জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনই কাঠফাটা রোরে মধ্যেই প্যাডেল ঘুরিয়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে তাকে। শফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই ঢাকায় খুব গরম বেড়েছে। তবে এবারের মতো গরম আর পড়েনি। রাস্তায় বের হলেই শরীরটা রোে পুড়ে যায়। কিন্তু আমারে তো আর ঘরে বসে থাকার উপায় নাই! গরম পড়লেও রিকশা নিয়ে বাইরে বের হতে হয়। গত কয়েকেিনর গরমে রাজধানীতে বেড়েছে রিকশা ভাড়া। রিকশাচালকরা কিছু টাকা বেশি পেলেও লাভ তেমন হয় না। কারণ একবার বা দুইবার যাত্রী বহন করলেই আধাঘণ্টার বেশি বিশ্রাম নিতে হয়। আবার চাইলে বেশি দূরের যাত্রী বা অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা যায় না। গরমের কারণে রাস্তায় যাত্রীর সংখ্যাও কম। শরীর ভালো রাখতে খেতে হয় বিভিন্ন ধরনের পানীয়। ফলে আয়ের তুলনায় ব্যয়টাই বেশি হয়ে যাচ্ছে রিকশাচালকদের।

রিকশাচালক শফিকুল বলেন, আগে ৮ ঘণ্টা রিকশা চালাতে পারলে এখন চালাতে হয় ৪ ঘণ্টা। বাকি ৪ ঘণ্টা বিশ্রাম করতে হয়। নইলে শরীরে শক্তি পাই না। ভাড়া কিছুটা বাড়ছে। গরমের কারণে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ১০ টাকা হয়তো বেশি নেওয়া যায় যাত্রীদের কাছ থেকে। কিন্তু সেটা থাকে না। বরং দুই-তিনবার যাত্রী বহন করলে একটু ঠান্ডা শরবত খেতে হয়। এতে চলে যায় ২০-৩০ টাকার বেশি।

শফিকুলের মতোই গরমে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন রাজধানীর শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীসহ সারা দেশে বইছে তাপপ্রবাহ। এতে হাঁসফাঁস দশা সবার। বিশেষ করে শ্রমজীবীদের এই তীব্র তাপদাহের মধ্যে ঘরের বাইরে কাজ করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কে গাছের পরিমাণ কমায় পরিবহনের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা ঠিকমতো বিশ্রামের জায়গাটুকুও পাচ্ছে না।

রাজধানীর পান্থপথ এলাকার প্রধান সড়কের পাশে একটি নিমগাছের নিচে বিশ্রাম করছিলেন কয়েকজন রিকশাচালক। তাদের একজন মোমিন, মাত্রই মতিঝিলে যাত্রী নামিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ধানমন্ডি েেক মতিঝিল যেতে পে তিনবার দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিতে হয়েছে। কিন্তু রাস্তায় তো বিশ্রাম নেওয়ার মতো গাছ পর্যন্ত নেই। শরবত খেতে হয়েছে দুই বার। আমাদের মতো গরিবদের কষ্ট সয়ে গেছে। গরম হোক বা শীত, আমাদের বসে থাকার অবসর নেই।

পুরান ঢাকার লালবাগ েেক নডুলসের প্যাকেট নিয়ে মিরপুরে একটি দোকানে যাচ্ছিলেন ভ্যানচালক আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, পুরান ঢাকা েেক কারওয়ান বাজার মোড় পর্যন্ত আসতে দুই ঘণ্টা সময় লাগছে। পথে ১০-১২ বার দাঁড়াতে হয়েছে বিশ্রামের জন্য। এমন গরম না থাকলে হয়তো দুইবার াঁড়ালেই এখানে চলে আসতে পারতাম। এই গরমে মাল টানতে খুবই কষ্ট হয়। কিন্তু এই কাজ ছাড়া আর তো কিছু করার নেই। এই কাজ না করলে খাবো কী? আগে েিন দুই তিন জায়গায় পণ্য আনা-নেওয়া করতাম। কিন্তু এখন একবার নিয়ে আর পারি না। শরীর সায় দেয় না। আবার রাস্তায় গাছও নেই যে, একটু শান্তিতে বিশ্রাম নেব। চায়ের দোকানই ভরসা। খামারবাড়ি পার হলে হয়তো একটু গাছের ছায়ায় যেতে পারব।

গরমের কারণে যাত্রী কমেছে রাইড শেয়ার করা মোটরসাইকেল চালকরেও। সাইফুল ইসলাম নামে এক রাইডার বলেন, গরমের কারণে েিনর বেলা যাত্রীরা মোটরসাইকেলে উঠতে চায় না। কারণ যানজটে পড়লে রোদে খুবই খারাপ লাগে। রাতে হয়তো কিছুটা যাত্রী পাওয়া যায়। ফলে আগে যেখানে কয়েক ঘণ্টা রাইড শেয়ার করলেই এক হাজার টাকা আয় হতো, সেখানে এখন সারা দিনেও এক হাজার টাকা আয় হয় না। একই অবস্থা সিএনজি চালিত অটোরিকশাচালকদেরও। হেলাল উদ্দিন নামের এক চালক বলেন, সিএনজিতে অনেক তাপ লাগে। যার কারণে মানুষ উঠে হাঁসফাঁস করে। আর তাছাড়া রাস্তায় মানুষও কম। আগে যে সময়ে ১০ বার যাত্রী পরিবহন করতাম, সেখানে এখন ৬-৭ বার করতে হয়। একই অবস্থা বাসচালক, লেগুনা চালকসহ সব শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের সব মানুষের। তাপদাহ এসব মানুষের কষ্টের জীবনকে করে তুলেছে আরও কষ্টদায়ক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

spot_img

Popular

More like this
Related

ট্রাম্পের জয়ে সম্পর্কে বড় পরিবর্তন হবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক:- ট্রাম্পের জয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে বড়...

শহীদ নাফিজের দেহ বহনকারী সেই রিকশা গণভবন জাদুঘরে

অনলাইন ডেস্ক:- বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ গোলাম নাফিজের দেহ বহনকারী...

ফ্যাসিস্টদের কাছে সমন্বয়ক শব্দটি এখন গালি: হাসনাত

অনলাইন ডেস্ক:- ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার ও তার দোসরদের কাছে...

আইনের চোখে পঞ্চদশ সংশোধনী অচল: বিএনপির আইনজীবী

অনলাইন ডেস্ক:- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ...