ছাত্রলীগকে ৭ দিনের মধ্যে নিষিদ্ধ করার দাবি মাহমুদুর রহমানের

Date:

অনলাইন ডেস্ক// অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আগামী সাত দিনের মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার মাধ্যমে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন দৈনিক ‘আমার দেশ’ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এই দাবিসহ তিনি মোট সাতটি দাবি জানিয়েছেন বর্তমান সরকারের কাছে। রোববার (৬ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ দাবি তুলে ধরেন।

মাহমুদুর রহমানের উত্থাপিত সাত দফা দাবি হলো
১. ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা, শিল্প ও গণপূর্ত উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রাজনৈতিক সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করতে হবে;
২. বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে এক সপ্তাহের মধ্যে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে;
৩. যমুনা সেতুকে শহীদ আবু সাইদের নামে নামকরণ করতে হবে, যাতে মানুষ সেখান দিয়ে পার হওয়ার সময় শতাব্দীর পর শতাব্দী আবু সাইদকে দেখতে পায়;
৪. ২০০৯ সালের পর থেকে ভারতের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে তার প্রত্যেকটা ধারা-উপধারা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। ভারতের সঙ্গে কী কী চুক্তি হয়েছে তাজনগণকে জানাতে হবে। এগুলো পুনর্বিবেচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করতে হবে, যেখানে ভারতের ও ফ্যাসিবাদের দোসর থাকতে পারবে না;
৫. বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউকে শহীদ আবরারের নামে নামকরণ করতে হবে, কারণ শহীদ আবরার এই ফ্যাসিবাদ আন্দোলনের প্রথম শহীদ। মনে রাখতে হবে, শেখ মুজিব বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরাচার নেতা। আর শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের আইকন হচ্ছে শেখ মুজিব;
৬. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের মনোনয়ন অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে। কারণ এই পুতুলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল জালিয়াতির মাধ্যমে;
৭. এবং আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে কারাগারে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম এবং বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টুর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে হবে।

মতবিনিময় সভায় মাহমুদুর রহমান বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে আসার পর যে পাঁচ দিন আমি কারাগারে ছিলাম। আমার জন্য যে পরিমাণ ভালোবাসা দেশের মানুষ ও দেশের বাইরে থেকে মানুষ দেখিয়েছেন, তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আমি এর যোগ্য নই। আমি বিশিষ্ট ব্যক্তি নই, রাজনৈতিক ব্যক্তি নই। এরকম কোনো আকাঙ্ক্ষাও আমার নেই। আমি এদেশের আম-জনতার বর্ষীয়ান একজন প্রতিনিধি মাত্র।

তিনি বলেন, আমার দেশ স্বাধীনতার কথা বলে, এই বার্তা আমরা পত্রিকা থেকে দিতাম। এই কথাটা ছিল আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতের আধিপত্যবাদের বিরোধী কথা বলার ক্ষেত্রে একটি মেসেজ। এটি তারা বুঝতে পেরেছিল। বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়া এখনো ভারতীয় ফ্যাসিবাদীরা দখল করে বসে আছে। এটিই সত্য। মিডিয়ার মালিক বা সম্পাদক, এদের বেশিরভাগই ভারতের এজেন্ট।

‘মৌলবাদ’ শব্দ ব্যবহার না করতে সরকারকে সতর্ক করে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক বলেন, অতি ইসলামিক এবং মৌলবাদ ট্যাগ ব্যবহারকারীদের প্রতিহত করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের একটি সংস্কার কমিটির দায়িত্বে আছেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বললেন, দেশে নাকি ‘মৌলবাদের’ উত্থান হচ্ছে। সরকারে থেকে এ ধরনের ব্যক্তিগত কথা বলা যায় না। তার বক্তব্য সরকারের বক্তব্য হয়ে যায়। তিনি এই ‘মৌলবাদ’ কোথায় পেলেন। এই ‘মৌলবাদ’র কার্ড ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে, এটি ব্যবহার করে আয়নাঘর হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে তারা। এখন ইফতেখারুজ্জামান আবার ‘মৌলবাদ’ কার্ড ব্যবহার করছেন, আপনার উদ্দেশ্য কী। নতুন কায়দায় ভারতীয় আধিপত্যবাদ বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করা আপনার উদ্দেশ্য। আপনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বলেন, আমরা আপনার সঙ্গে আছি। ‘মৌলবাদ’ শব্দ ব্যবহার করবেন না। তাই সরকারকে এ বিষয়ে আমি সতর্ক করে দিতে চাই।

জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, অতি ইসলামিকও হবেন না। ফ্যাসিবাদের সময় আপনারা কিছু করতে পারেননি। এখন স্বাধীনতা পেয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না। এর কারণে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। যারা বাড়াবাড়ি করছেন আস্তিক আর নাস্তিক, হিন্দু ধর্ম নিয়ে; এতে ভারতীয় যে কৌশল তা আপনারা বাস্তবায়ন করবেন।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এতই পাওয়ারফুল যে তাকে এক এগারোর সরকারে নিতে আইন পরিবর্তন করতে হয়। বর্তমান সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আমেরিকায় সফরসঙ্গী হিসেবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ যাননি, গেছেন দেবপ্রিয়। এই দেবপ্রিয় ২০০৫ সাল থেকে এক-এগারোর সরকারের সময় পর্যন্ত দেশে ইন্ডিয়ান করিডোর দিতে প্রতিদিন ক্যাম্পেইন করতেন। বিদেশের টাকা নিয়ে প্রতিদিন ক্যাম্পেইন করেছেন তিনি। তার বক্তব্য সেদিন ছিল যে, করিডর থেকে দেশ যে শুল্ক পাবে তা দিয়ে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে। তার কাছে আমরা জানতে চাই, গত ১৬ বছরে ট্রানজিট থেকে কত ডলার বাংলাদেশ আয় করেছে। এখন পর্যন্ত কেউ সরকারকে এ প্রশ্ন করেননি। আমরা দেখেছি সংবাদ সম্মেলনে কী করা হতো। আমার দেশ থাকলে এই প্রশ্ন করা হতো। এই দেবপ্রিয়কে তার মানুষকে স্বপ্ন দেখানোর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।

মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, যে দলই ক্ষমতায় আসুক, বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত—যারাই আসুক; দিল্লির পক্ষে যারা কথা বলবে তাদের সঙ্গে আমাদের লড়াই চলবে। আমি যতদিন জীবিত আছি ততদিন আমার লড়াই চলবে। আমি সবাইকে কথা দিচ্ছি, জনগণের কাতারে থেকে জনগণের জন্য মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

spot_img

Popular

More like this
Related

ট্রাম্পের জয়ে সম্পর্কে বড় পরিবর্তন হবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক:- ট্রাম্পের জয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে বড়...

শহীদ নাফিজের দেহ বহনকারী সেই রিকশা গণভবন জাদুঘরে

অনলাইন ডেস্ক:- বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ গোলাম নাফিজের দেহ বহনকারী...

ফ্যাসিস্টদের কাছে সমন্বয়ক শব্দটি এখন গালি: হাসনাত

অনলাইন ডেস্ক:- ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার ও তার দোসরদের কাছে...

আইনের চোখে পঞ্চদশ সংশোধনী অচল: বিএনপির আইনজীবী

অনলাইন ডেস্ক:- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ...