আরব আলী বিশ্বাস : বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএস। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস রুলস অনুযায়ী প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম শ্রেণির গেজেটভুক্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। ২৬টি ক্যাডারে বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্য থেকে এ জনবল নিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে সাধারণ, কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডার। তিন ধাপে (প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক) পরীক্ষার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন এই নিয়োগ প্রদানের কাজটি করে। চাকরিপ্রাপ্তদের বলা হয় বিসিএস ক্যাডার। ব্রিটিশ পাবলিক সার্ভিস, পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস এর পরিণত রূপ হচ্ছে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে দেশের লাখো তরুণকে সরকারি চাকরির জন্য তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়! নিঃসন্দেহে বিসিএস তাঁদের ‘প্রথম’ পছন্দ! হাজারো সোনালি স্বপ্ন, আশা-আকাক্সক্ষা, উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে তাঁরা অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন কর্তৃক গৃহীত বিসিএস পরীক্ষায়। প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবীরাই লিখিত পরীক্ষার টিকিট পান। আগ্নেয়গিরিসম লিখিত পরীক্ষার বৈতরণি পেরোলে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুবর্ণ সুযোগ মেলে। চূড়ান্ত ফলাফলের সময় পিএসসি ক্যাডার আর নন-ক্যাডারভিত্তিক তালিকা প্রকাশ করে! যাঁরা একটু বেশি নম্বর পেয়ে ক্যাডার তালিকায় স্থান পান, তাঁরা গেজেটেড অফিসার হিসেবে সরকারি চাকিরতে যোগদান করেন। আর যাঁরা নন-ক্যাডারের তালিকায় থাকেন, তাঁরা হন বিড়ম্বনা, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার! এই বৈষম্যের শুরু পিএসসির ক্যাডার আর নন-ক্যাডার বিভাজনের ঘোষণা থেকে!
বিগত হাসিনা সরকারের আমলে ২৯ থেকে ৪৪ বিসিএসে মেধা ও যোগ্যতার তোয়াক্কা না করে নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ক্যাডারদের লিস্ট করে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের উপদেষ্টা এইচ.টি.ইমাম ছাত্রলীগদের নিয়োগ দিতেন অধিকাংশ ক্ষেত্রে। ইতিহাসের নজির স্থাপন করে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ভাইভা পরীক্ষার পূর্বে এনএসআই, ডিজিএফআই, ডিএসবি এবং ছাত্রলীগের বিশেষ গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ভিন্নমতের চাকুরী প্রার্থীদের ভাইভা পরীক্ষায় ইচ্ছাকৃত কম নম্বর প্রদান করে এবং যারা লিখিত পরীক্ষায় ভালো করেছেন তাদেরকে ভাইভা ফেল করানোর মাধ্যমে আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন মতাদর্শের চাকুরীপ্রার্থীদের যারা লিখিত পরীক্ষায় অধিকতর ভালো নম্বর/ফলাফল করেছেন, তাদের ফলাফল ফিক্সিং করার মাধ্যমে বিসিএস চাকুরীতে যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হয়েছে মর্মে ভুক্তভূগীদের নিকট হতে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে, আমাদের কাছে। এমনকি ছাত্রলীগের ক্যাডারদেরকে তদাস্থলে পদায়ন করার মাধ্যমে নিয়োগ লাভের সুযোগের সমতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে মর্মে এ প্রতিনিধি দলের নিকট ক্ষোভ, হতাশা ও অভিযোগ প্রকাশ করেন, চাকুরীতে বৈষম্যের স্বীকার একজন বিসিএস পরীক্ষার্থী। আরেকজন পরীক্ষার্থী জানান ছাত্রলীগের নামধারী ক্যাডারদের প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করে, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্র সহ বিসিএসের মতো গুরুত্ত্বপূর্ণ পদে অনেককেই পদায়ন করা হয়েছে এবং এর ধারাবাহীকতা ধারাবাহিকতা ২৯ তম বিসিএস থেকে শুরু হয় ৫ আগষ্ট, ২০২৪ এর পূর্ব পর্যন্ত সকল বিসিএসএস পরীক্ষায় অব্যাহত ছিল। ৩১ তম বিসিএসে সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা হতে ফর্ম বিক্রি করা হতো, কিন্তু দুঃখের বিষয় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ পিএসসসির সাথে যোগ-সাজশে আবেদন ফর্ম এর সিরিয়াল নম্বর মিল রেখে তাদের দলীয় চাকুরীপ্রার্থীদের একসাথে পরীক্ষার সিট ফেলে প্রিলিমিনিরী, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করানো হয় মর্মে একজন এ প্রতিনিধির কাছে অভিযোগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র তার জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করবে। এটা একাধারে মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার দুটোই। সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্র প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করবে। কিন্তু অত্যন্ত হতাশা ও দুঃখের সাথে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার তার দলীয় চিন্তা-চেতনার সফল বাস্তবায়নের নিমিত্তে রাষ্ট্রের এমন কোন অংশ নাই যে, সেখানে দলীয়করণ ও বেষম্য সৃষ্টি করেন নাই। আর এক্ষেত্রে প্রজাতন্ত্রকে হাতের মুঠোয় নিয়ে সকল রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, ভোটাধিকার সহ সকল প্রকার সমতার অধিকারকে নজিরবিহীনভাবে ভুলণ্ঠিত করে, পদদলিত করে রাষ্ট্রের সকল সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকাকে নষ্ট করেছেন।আর এক্ষেত্রে প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ নিয়োগ পরীক্ষা বিসিএসে নজিরবিহীন দলীয়করণ করে রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগে সর্বোচ্চ আওয়ামীকরণ করে প্রশাসনকে দলীয় দাসে পরিণত করেছেন। রাষ্ট্রীয় সুশাসন নস্যাৎ করে সর্বত্র একনায়কতন্ত্র কায়েম করে রাষ্ট্রের সকল ধরণের প্রশাসনিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছেন। যার উজ্জল দৃষ্টান্ত পুলিশ প্রশাসন যা রাষ্ট্রীয় বাহিনী থেকে আওয়ামী- হাসিনা-ছাত্রলীগের বাহিনীতে রূপান্তিরত হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত, মেধাবী চাকুরী প্রার্থীদের পিএস সি কর্তৃক তালিকা নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগকে সরবরাহ করা হয়। ছাত্রলীগ উক্ত তালিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ও চাকুরী প্রার্থদের গ্রামের ঠিকানায় খোজ খবর নিয়ে যাদের ছাত্রদলের এবং ভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্ঠতা ছিল তাদেরকে ইচ্ছাকৃত ভাবে লিখিত পরীক্ষায় নাম্বার ফিক্সিং, ভাইভাতে কম নম্বর ও অকৃতকার্য করানো হয়েছে, মর্মে এ প্রতিনিধির নিকট চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী একজন পরীক্ষার্থী। এ প্রতিনিধিদলের নিকট একজন পরীক্ষার্থী জানান লিখিত পরীক্ষার শেষে নিলক্ষেত এলাকাতে ছাত্রলীগের হামলার স্বীকার হয় এবং তার নিকট থেকে বিসিএসের প্রবেশপত্র ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে যায়, পরবর্তীতে কিছুদিন পর তাকে তার প্রবেশপত্র ফেরত প্রদান করা হয় এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বলে ভালোভাবে প্রিপারেশন নিয়ে পরীক্ষা দিতে থাকো, আমরা তোমাকে কিছু বলবো না (পরে বুঝবা) উক্ত পরীক্ষার্থী ২৯ তম বিসিএস থেকে টানা ৩৩ তম বিসিএস পর্যন্ত সকল বিসিএসেই প্রিলিমিনারী, লিখিত ও ভাইভায় অংশগ্রহণ করে, কিন্তু দলীয় বিবেচনায় তাকে ভাইভাতে কখনো ফেইল করানো, কখনো ভাইভা নম্বর কমিয়ে দেওয়া, ও উদ্ভট প্রশ্নের মাধ্যমে বিব্রত করানো হয়।৩১ তম বিসিএসে ভূক্তভোগী এক চাকুরী প্রাথীকে উদ্ভট/অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করা হয়েছে, যেমন উক্ত প্রার্থীর বাড়ি উত্তরবঙ্গে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল আপনি নর্থ বেঙ্গল থেকে ঢাকা আসতে একটা বড় ব্রিজ অতিক্রম করে আসেন, ব্রিজটির নাম কি? উত্তরে প্রার্থী বলেছিলো যমুনা সেতু।
পরীক্ষক পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন যমুনা সেতু না বঙ্গবন্ধু সেতু। উত্তরে প্রার্থী পরীক্ষকের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন? এতে পরীক্ষক আরো উত্তেজিত হয়ে তাকে রুম থেকে বের করে দেন।
Date: