ইসমাইল মাহমুদ:মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে নারী চা শ্রমিক ও অন্যান্য কর্মজীবী নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য সমাধানে ১৬ দিনের প্রচারাািন শীর্ষক দিনব্যাপী সংলাপ এবং চা শ্রমিকদের নিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থ ‘টি ওয়ার্কার্স অব বাংলাদেশ: রিয়ালিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’র মোড়ক উন্মাচন অনুষ্ঠান বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) উপজেলার উত্তরসুরস্থ ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্টান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (সেড) পরিচালক ফিলিপ গাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংলাপে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মাহবুবুল হাসান, মৌলভীবাজারের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সত্যকাম চক্রবর্তী, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম ইদ্রিস আলী, শ্রীমঙ্গল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুয়েব হোসেন চৌধুরী, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরী, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকার, সহ-সভাপতি জেসমিন আক্তার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল এবং অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দী। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা হরিজন ঐক্য পরিষদের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা বাসন্তি বাসফোর, চা শ্রমিক ইউনিয়ন জুড়ী ভ্যালী কমিটির সহ-সভাপতি শ্রীমতী বাউরি, যৌন অধিকারকর্মী রাজিয়া সুলতানা, হিজরা অধিকারকর্মী ইভান আহমেদ কথা, পরিচ্ছন্নতাকর্মী সুকন বাসফোর প্রমুখ।
সংলাপে চা শ্রমিকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, কর্মপরিবেশ, চা বাগানে শ্রম আইনের প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, মজুরি, স্বাস্থ্য, নারীর প্রতি সহিংসতা, সামাজিক সুরক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত ও বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়।
প্রারম্ভিক বক্তব্যে চা বাগান নিয়ে সেড’র এই নতুন প্রকাশনা ‘টি ওয়ার্কার্স অব বাংলাদেশ: রিয়ালিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ এবং পূর্বের আরও ১০টি গ্রন্থের সাথে সবাইকে পরিচিত করে সেড’র পরিচালক ফিলিপ গাইন বলেন, ‘বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান চা শিল্পের মালিকানায় শ্রমিকদের অংশিদারিত্ব দেওয়ার পক্ষপাতি। এরকম স্মল হোল্ডিং-এর মডেল আছে শ্রীলঙ্কায়। এ ধরণের মডেল নিয়ে কী আমরা বাংলাদেশে কথা বলতে পারছি? তাহলে কীভাবে বৈষম্যের অবসান হবে?’
সংলাপে পেশাজীবীদের পক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে যৌনকর্মীদের নিয়ে কর্মরত অধিকার কর্মী রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘পূর্বেও রাষ্ট্রের কাছে যৌনকর্মীরা তেমন সাহায্য পায়নি। ছাত্র আন্দোলনের পরে এই কর্মীদের অবস্থা এখন আরও খারাপ। ভাসমান যেসব যৌনকর্মী আছে তারা এখন রাস্তায় কোথাও দাঁড়াতে পারে না, ছাত্র পরিচয়ে কেউ না কেউ তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। খেয়ে-পরে বাঁচার জন্য উপার্জনতো ওদের কিছু লাগবে। এই পরিচয়ের কথা শুনলে অন্য কোনও চাকুরিতেও তাদের কেউ নিতে চায় না। কোথায় যাবে এরা?’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের জুড়ী ভ্যালী কমিটির সহ-সভাপতি শ্রীমতি বাউরি বলেন, ‘আমাদের মতো চা শ্রমিক, বিশেষ করে মাঠে কাজ করা এতো নারী চা শ্রমিকের কথা চিন্তা করে কী শ্রম আইনের সংশোধন হয়? পাতাতোলার সেকশনে না আছে শৌচাগার, না আছে বিশুদ্ধ খাবার পানি। এতোসব লঙ্ঘনের অবসান কবে হবে? আশা করি বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকার এইদিকে নজর দিবেন।’
দিনব্যাপী সংলাপে সাংবাদিক, সমাজকর্মী, যৌনকর্মী প্রতিনিধি, হিজরা প্রতিনিধি, চা শ্রমিক প্রতিনিধি, বেদে প্রতিনিধি, ঋষি প্রতিনিধি, কায়পুত্র প্রতিনিধি, জলদাস প্রতিনিধি ও বিহারী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।