নিজস্ব প্রতিবেদক: রেস্তোরাঁ ব্যবসা এখন জমজমাট। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ছোটো-বড় সব রাস্তার মোড়ে মোড়ে, এমনকি চলন বিলের প্রত্যন্ত গ্রামেও দোর চলছে রেস্তোরাঁর ব্যবসা। ভোজনরসিকরাও ভিড় করছেন রেস্তোরাঁগুলোয়। প্রতিদিন লাখ টাকার বেশি লেনদেন হলেও এ খাত েেক কাক্সিক্ষত রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার। র্অনীতিবিদরা বলছেন, হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে এনবিআর কঠোর হলে এ খাত থেকে অন্তত তিনগুণ বেশি ভ্যাট পাওয়া সম্ভব। কারণ পরিবার-স্বজন-বন্ধুদের নিয়ে মানুষ এখন নিয়মিত নামিদামি বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেদার খরচ করছে। অনেক রেস্তোরাঁ আছে যেখানে সামান্য কিছু খেলেই এক থেকে দুই হাজার টাকা বিল দিতে হয়। আবার কোনও কোনও নামিদামি রেস্তোরাঁয় একজনের এক বেলা খাবারের বিলই দিতে হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বা তারও বেশি, পরিবারের কয়েকজনকে নিয়ে খেলে খরচ আরও বেশি। মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও রুচির পরিবর্তনের ফলে জেলা ও উপজেলা শহরেও বাড়ছে নতুন নতুন রেস্তোরাঁ। এ খাতে এখন বিনিয়োগ করছেন তরুণ উদ্যোক্তাগণ। উন্নত বিশ্বের আলে অনেক চেইন রেস্তোরাঁও এখন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ঢাকা এখন রীতিমতো রেস্তোরাঁর নগরীতে পরিণত হয়েছে। ঢাকার এমন কোনও অলিগলি নেই যেখানে একাধিক রেস্তোরাঁ পাওয়া যাবে না। আবাসিক ভবনগুলোতেও গড়ে উঠেছে ছোট-বড় দেশি-বিদেশি হোটেল-রেস্তোরাঁ। এরই মধ্যে সরকারিভাবে রেস্তোরাঁকে শিল্পের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলো, এসব হোটেল-রেস্টুরেন্ট ভোক্তারে পকেট থেকে ঠিকই টাকা রাখছে। কিন্তু এ খাত থেকে কাঙ্ক্ষিত হারে ভ্যাট পাচ্ছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অভিযোগ আছে, ছোট-বড় সব হোটেল-রেস্তোরাঁ একযোগে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে।
যদিও এনবিআর হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতের ভ্যাট মাত্র ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। অবশ্য আগে সব ধরনের রেস্তোরাঁকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হতো। ২০২১ সালে প্রথম দফায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্টুরেন্টের ভ্যাট কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এরপরও এনবিআর কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে ভ্যাট আদায় করতে পারছে না।
ভ্যাট আইন অনুযায়ী, পণ্য ও সেবার বিপরীতে গ্রাহকের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে প্রতি মাসে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হোটেল-রেস্তোরাঁর দায়িত্ব। কিন্তু ভ্যাট আদায় করলেও তারা সরকারি কোষাগারে তা জমা দেয় না।
এ প্রসঙ্গে একাধিক কমিশনারেটের কমিশনার বলছেন, হোটেল রেস্তোরাঁ থেকে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করতে ইএফডি মেশিন স্থাপনের কাজ চলমান আছে।
এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সদস্য ড. মইনুল খান বলেন, ‘খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট আদায়ে এনবিআর তৎপর রয়েছে। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৬ হাজার নতুন ইএফডি মেশিন বসানো হয়েছে। আগামী জুন নাগাদ ঢাকা ও চট্টগ্রামে আরও ৬০ হাজার মেশিন স্থাপন করা হবে।’
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) মোট ভ্যাট আদায় হয়েছে ৭৭ হাজার ২২৪ কোটি টাকা। এই সাত মাসে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৮০ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ভ্যাটে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এনবিআর পিছিয়ে রয়েছে ৩ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে পুরো সময়ে ভ্যাট থেকে ১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।