সাড়ে ১৫ বছরে বিএনপির হাজার-হাজার নেতাকর্মী মারা গেছেন: ডা. জাহিদ

Date:

ইসমাইল মাহমুদ:বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘বিএনপি যে ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছে তা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি সুসংহত ও সময়োপযোগী নীতিমালা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই প্রস্তাবনায় গণতন্ত্রের বর্তমান সংকট নিরসন এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাগুলো নিয়ে একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৩১ দফা এক গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হিসেবে উঠে এসেছে। গণতন্ত্র, সুশাসন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারের ভিত্তিতে প্রণীত এই দফাগুলো দেশকে নতুন এক যুগের পথে নিয়ে যেতে পারে।’ তিনি বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে মৌলভীবাজার পৌরসভা মিলনায়তনে জেলা বিএনপির আয়োজনে আহবায়ক কমিটির সকল সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের সংকট বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিনের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির ৩১ দফায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং শক্তিশালীকরণের জন্য স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করার মতো বিষয়গুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই নিবন্ধে আমরা ৩১ দফার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে দেখব কীভাবে এটি গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে পারে এবং দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
ডা. জাহিদ বলেন, ‘মরহুম এম সাইফুর রহমান স্যারের মতো অনেক মুরুব্বিদের ত্যাগ তিতিক্ষা, শ্রম, কষ্টের প্রেক্ষিতে আজকের বিএনপি এ পর্যায়ে এসেছে। উনাদের কথা ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে এমন গুণীদের ত্যাগ তিতিক্ষা শ্রমের কথা। এখন কেউ যদি মনে করে আমরাই সব তাহলেতো হবে না। গুণীদের সম্মান না করলে আপনাকেও কেউ সম্মান করবে না। আজকের ইয়ং জেনারেশন ছাত্রদল, যুবদল আমাদের কাছ থেকেই শিখবে। যে মানুষগুলো এই দলটাকে এই পর্যন্ত এনেছেন তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানানো উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের মৌলভীবাজারের কপাল ভালো জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে একজনও শহীদ হয় নাই। কিন্তু হবিগঞ্জে দেখেন একদিনে কতজন মারা গেছে। তারপর সিলেটে দেখেন। সারা বাংলাদেশে ৪২২ জন বিএনপির নেতাকর্মী মারা গেছে জুলাই এবং আগস্ট মাসে। আর হাজার হাজার নেতাকর্মী মারা গেছে গত সাড়ে ১৫ বছরে। ছাত্র জনতার আন্দোলনে ২ হাজারেরও বেশি শহীদ হয়েছেন। ত্রিশ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীর চোখ নাই, পা নাই, হাত নাই। তাদের জন্য আজকে আমরা কথা বলতে পারতেছি। ইলিয়াস আলী কোথায় আছেন আমরা বলতেও পারি না। তার স্ত্রী, ছেলে, মেয়েরা জানে না সে কি জীবিত না মৃত। এ জিনিস গুলো যদি ভুলে যান তাহলে কিন্তু খুবই দুর্ভাগ্য আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। কাজেই মনে রাখতে হবে তাদের সবার অবদান। ইলিয়াস আলী না শুধু, তার ড্রাইভারের অবদান রয়েছে। তার ড্রাইভার কোথায়? দিনার কোথায়? জুনেদ কোথায়? চৌধুরী আলম কোথায়? সাবেক এমপি হিরু কোথায়? জানি না। সেই আয়না ঘর থেকে আমরা কিছু লোককে ফেরত পেয়েছি। কিন্তু মোষ্ট অব দি পিপুলকে তো আমরা ফেরত পাইনি।’
সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের প্রধান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বিগত সময়ে যারাই আন্দোলন সংগ্রামে ছিল তারাই নেতৃত্বে আসবে। হঠাৎ করে এসে কেউ নেতা হতে পারবেন না। ছাত্রদলে ছিলেন কিনা, যুবদলে ছিলেন কিনা, স্বেচ্ছাসেবক দলে ছিলেন কিনা, বিএনপির মেম্বারশিপ ফর্ম ফিলাপ করা আছে কিনা এগুলো কিন্তু লাগবে। কোন অবস্থাতেই আপনি হুট করে নেতা হতে পারবেন না। বিএনপি একটা অর্গানাইজেশন। কোনও অবস্থাতেই ভাবার কারণ নেই, কেউ বিএনপির জন্য খুবই অত্যাবশ্যকীয়। এ বিষয়টা সবার মাথায় রাখতে হবে। বিএনপির আনুগত্য হচ্ছে, দলের গঠনতন্ত্র এবং লিডারশীপ। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন তাঁকে আর কখনও দেশনায়ক বা রাষ্ট্রনায়কও বলবেন না। দয়া করে এ প্র্যাকটিসটা সকলে করবেন। ইউনিটগুলোর যে আহবায়ক কমিটি বানাবেন ওখানে খেয়াল রাখতে হবে যাদের কমিটি এরই মধ্যে বিলুপ্ত করেছেন এই লোকগুলো কিন্তু বিগত সাড়ে পনের বছর তাদের ইউনিটগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছে। তারা খারাপ দেক, ভালো দেক, যাই দেক, কম দেক, নির্লিপ্ত থাকুক তারাই ছিল নেতা। কাজেই ৫ আগস্ট বা ছত্রিশে জুলাই না হলে বা আজকের কর্মী সমবেশের উপস্থিতিতি দেখে মূল্যায়ন করলে চলবে না। উপস্থিতিতিটা বিবেচনা করতে হবে অতীতে যারা দলের কর্মসুচী বাস্তবায়নে আন্তরিক ছিল সেই মানুষগুলোকে মূল্যায়ন করতে হবে। যতদূর সম্ভব তাদেরকে আগে মূল্যায়ন করতে হবে। তারপর অন্য নেতাদেরও গুরুত্ব দিতে হবে। যারা আমাদের সাথে ছিল, যারা একটা ইউনিয়নে, একটা ওয়ার্ডে, একটা উপজেলায়, একটা পৌরসভায় বিএনপির নেতৃত্বে¡ ছিলেন তাদেরকে অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে। তবে এটাও ঠিক এবার যে (উপজেলা ও পৌরসভার) আহবায়ক কমিটি হবে সে ইউনিটের আহবায়ক কমিটির আহবায়ক (জেলা ইউনিটের আহবায়ক) কিন্তু ইলেকশন করে দলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু খুবই শুন্য। উনি নিউট্রাল গভর্মেন্টের মতো। কোন বায়াসনেস নাই। উনারতো কাউন্সিল নাই। উনি কাউন্সিলের সবকিছু করবেন। আয়োজন করবেন কিন্তু উনার কোন ভোট করার সুযোগ নাই। উনাকে নির্মোহ একটা অভিব্যক্তি থাকবে। একই ভাবে (উপজেলা ও পৌরসভা) ইউনিটের যে আহবায়ক থাকবে তারও কিন্তু একই অবস্থা হবে। জেলার আহবায়ক ভোট করবেন না আর রাজনগরের আহবায়ক ভোট করবেন এটা ভাইবেন না। এটি হবে না। অনলি পার্টির চেয়ারম্যান যদি কোন ক্ষেত্রে কোন ব্যত্যয় ঘটাতে চান তাহলে তিনি কাউন্সিলে অংশ নিতে পারবেন।’
জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূনের সভাপতিত্বে ও আহবায়ক কমিটির সদস্য মুহিতুর রহমান হেলালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব জিকে গউছ এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকী। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি এম নাসের রহমান, ফয়সল আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, আলহাজ্ব এম এ মুকিত, নাসির উদ্দিন মিঠু, মহসীন মিয়া মধু, মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক, ফখরুল ইসলাম, বকসী মিছবাউর রহমান, মতিন বকস, মনোয়ার আহমেদ রহমান, স্বাগত কিশোর দাশ চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান, আবুল কালাম বেলাল, গাজী মারুফ প্রমূখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

spot_img

Popular

More like this
Related

ভূরুঙ্গামারীতে মাদক বিরোধী অভিযানে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আসামী হয়ে হাজতে আছেন সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন আরিফ

আব্দাহিয়ুর রহমান আপেল: কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে মাদক বিরোধী অভিযানের তথ্য...

শ্রীমঙ্গলে হাজী সোনা মিয়া সুরজান বিবি আলিয়া মাদ্রাসায় মতবিনিময়

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে যুগোপযোগি আলেমে দ্বীন...

সদর দক্ষিণে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী গ্রেফতার

কুমিল্লা প্রতিনিধি : আজ ১২ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখ বিকেলে...

কুমিল্লায় ডিএনসি কর্তৃক ০৩ কেজি গাঁজাসহ আটক ৪  

কুমিল্লা প্রতিনিধি : ডিএনসি কুমিল্লার উপপরিচালক চৌধুরী ইমরুল হাসান...